অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিন

বঙ্গ পত্রিকা,ডেস্ক
 ছবি: বঙ্গ পত্রিকা
ছবি: বঙ্গ পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্র“য়ারির প্রথমার্ধে। সেই হিসাবে সময় বাকি ছয় মাসের মতো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো যেমন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, তেমনি ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রশাসন। প্রস্তুতি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ।
প্রশাসনের অনেকেই বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের বিষয়ে অনেকেই আপত্তি উঠাচ্ছেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। ভোটারদের মধ্যেও এক ধরনের দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখেই এগিয়ে চলেছে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগ আমলে তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই বেশি সমস্যায় রয়েছে কমিশন। নির্বাচনে আট লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে।
এর একটি বড় অংশই আসে স্কুল শিক্ষকদের থেকে। বিগত তিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিতে গেলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংকট তৈরি হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারাও মনে করছেন, তাঁদের সবাইকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না। বিশেষ করে পোলিং অফিসারদের সবাইকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। তাঁরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে চার লাখ।
দশম ও দ্বাদশ মিলিয়ে এই সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে হতে পারে। তিনটি নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছিল, সেসব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, যাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বাদ রাখার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই কর্মকর্তাদের অনেকেই ২০০১ কিংবা ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সঠিক হলে এই কর্মকর্তারা আবারও ভালোভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।
বিশেষজ্ঞরা বেশি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। বরাবরই দেখা যায়, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তত বেশি অবনতি হতে থাকে। এ বছর পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ গত বছর অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েকশ’ থানা, কারাগার ও পুলিশ স্থাপনায় হামলা হয়েছে। অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে। এখনো কিছু অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, এগুলো সন্ত্রাসীদের কাছে চলে গেছে। নির্বাচনের সময় সেসবের অপব্যবহার হতে পারে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যও জোর প্রস্তুতি চলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোতে নতুন করে প্রায় ২০ হাজার জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এসব বাহিনীতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বভিত্তিক প্রশিক্ষণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। জানা যায়, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাঁদের সবাইকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচন শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নয়, নির্বাচন হবে অত্যন্ত উৎসবমুখর। এর অন্যতম কারণ, এই নির্বাচন আদায় করতে দেশের মানুষকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সেই লক্ষে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিষয়:

রাজনীতি
এলাকার খবর

সম্পর্কিত