বাংলায় একটি প্রবাদ আছে‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’দেশের যে কোনো ঘটনা ঘটলে দায় এসে পড়ে ছাত্র রাজনীতির উপর।ছাত্র রাজনীতি হলো ছাত্রদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চায় মূলত ছাত্র রাজনীতি।দেশে এ ছাত্র রাজনীতির সোনালি একটি ইতিহাস রয়েছে।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,১৯৬৬ সালের ৬ দফা,১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান,১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন,১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক অর্জনে ছাত্রসমাজ সক্রিয় অংশগ্রহণের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।পরবর্তী সময়ে ৭১ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এদেশের ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ভূমিকা।একজন মানুষের জন্য ছাত্রজীবন মানেই একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়।সে সময় একজন ছাত্র নিজেকে ভবিষ্যতে উপযোগী একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকেন।এদেশের একজন মেধাবী ছাত্র আগামী দিনের সচেতন এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পারেন।সাধারণ মানুষের যেমন সব ক্ষেত্রে ইচ্ছেশক্তি এক নয়,তেমনি ছাত্রছাত্রদের ইচ্ছেশক্তি এক হয় না।একেকজন ছাত্রছাত্রীর একেক রকমের ইচ্ছাশক্তি থাকতে পারে।বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।তবে যারা দেশের সমৃদ্ধির জন্য মানুষের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চান,তাদের ছাত্ররাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিত।
বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি হারাতে বসেছে।রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতিকে ব্যবহার করছে।মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয়েছে রাজনীতির প্রতি অনীহা।গবেষকদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়,কারও কারও মতে,ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত।আবার কেউ কেউ মনে করেন ছাত্রদের স্বার্থ এবং দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অবস্থা বিকাশে ছাত্র রাজনীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।তবে অতীতের ইতিহাস বলে,এদেশে অবশ্যই ছাত্র রাজনীতি।
বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির বিরূপ অবস্থার সামান্য একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি ঝগড়া বিবাদ লেগে যায়।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এভাবে মারামারি করে প্রায় দেড়শত ছাত্রছাত্রী প্রাণ হারিয়েছে।পত্রিকা খুলতেই দেখা যায়,ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা চোখে পড়ে।এ সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিমুখ স্থায়ী সমাধান নয়।অতীতের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে আমরা দেখতে পাই,যারা রাজনীতি করতেন তারা ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী,নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করতেন,অন্যান্য কর্মকাণ্ডে জড়াতেন।যা এখনকার রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসেছে।
এই সমস্যা সমাধানের প্রথম শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে।একজন শিক্ষার্থীর প্রথম কাজ হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।ছাত্র রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হবে,শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন কি-না,পরীক্ষা দেরিতে হচ্ছে কেন,রেজাল্ট সময় মতো প্রকাশ করছে কি-না,বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য বাজেট বৃদ্ধি ও শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংবলিত বিভিন্ন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় কিংবা আদায় না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায়ের নাম ছাত্র রাজনীতি। এখন সময় এসেছে অনৈতিক অশুভ ছাত্র রাজনীতিকে শক্ত হাতে দমন করে এদেশের ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ফিরিয়ে আনা।
বদলে যাও,বদলে দাও।